PR পদ্ধতি শর্টকাট নয়, গণতন্ত্রের নামেই গেম খেলা! PR পদ্ধতিতে নির্বাচন মানে হলো ভোটাররা সরাসরি ব্যক্তিকে ভোট না দিয়ে ভোট দেন একটি দলকে। এরপর সেই দল দেশের মোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন পায়।
এতে ভালো দিক আছে, যেমন ছোট দল বা প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলো যারা কোন নির্দিষ্ট আসন থেকে জিতে আসতে পারতো না, তারা ছড়ানো-ছিটানো ভোট পেয়েও সংসদে ঢোকার সুযোগ পায়। এক শতাংশ ভোট পেলেই ধরে নিন ৩টি আসন। কাজেই শর্টকাটে সংসদে যাওয়ার জন্য এটিই সবচেয়ে সহজ রাস্তা।
বলতেই হয় ক্রিমিনালি বুদ্ধিটা খারাপ না। কারণ অনেক উন্নত দেশেও PR পদ্ধতি আছে। তবে দয়া করে শুধুমাত্র এই একটা ব্যবস্থা দেখে সেটাকে উন্নয়নের মাপকাঠি ভাববেন না। উন্নত দেশগুলোতে PR-এর সঙ্গে আরও অনেক গণতান্ত্রিক কাঠামো, জবাবদিহিতা এবং রাজনৈতিক পরিপক্বতা রয়েছে তাদের সবকিছু একসাথে ঘেঁটে দেখবেন, কেবল একটা স্লাইস কপি করে নয়।
ধরুন, আমি যদি বিএনপি সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম, তাহলে আমি PR পদ্ধতিতে রাজি হতাম একটা শর্তে PR ভোট হবে ঠিকই, পাশাপাশি প্রত্যেক আসনে জনগণের ভোটে নির্ধারিত হবে কে এমপি হবেন। মানে ওই আসন থেকে জনগণ কাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়।
এখন যদি দেখা যায়, বিএনপি ৩০০ আসনেই জনপ্রিয় প্রার্থী দিয়ে জিতে গেছে, কিন্তু সারাদেশে মোট ভোট পেয়েছে ৫০% তাহলে তারা ১৫০টা আসনের এমপি দিতে পারবে। কিন্তু যেহেতু ৩০০ টিতেই জিতেছে, তাহলে বাকি ১৫০ জন এমপি বিএনপির হবেন, দলীয় প্রতীক যাই হোক না কেন। কারণ জনগণ তাকে চেয়েছে।
কিংবা আবার যদি দেখা যায়, আপনার দল ৫০% ভোট পেয়েছে, তারমানে আপনি ১৫০টা আসন পাবেন কিন্তু কোথাও আপনার প্রতিনিধি নির্বাচিত হইতে পারে নাই, তাহলে আপনি কোন এমপি দিতে পারিবেন না, মানে সংসদে কোন আসন পাবেন না।
এইভাবে করলে তিনটা বড় সমস্যা একসাথে মিটে যায়:
১. PR পদ্ধতিতে দলীয় অনুপাত মেনে নির্বাচন হয়।
২. আবার আগের পদ্ধতির মতো প্রত্যেক এলাকায় সরাসরি ভোটে জনপ্রিয় প্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়।
৩. স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য কোনো বাঁধা থাকে না তারা যদি জনগণের ভোটে জিততে পারে, সংসদে ঢুকবে।
তবে যারা PR পদ্ধতির নামে আজ আন্দোলন করছে, তারা এই ভার্সনে রাজি হবে না। কারণ তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো ছিটকানো ভোটে এমপি হওয়া যেখানে আসলে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করলেও সংসদে ঢোকার একটা রাস্তা খোলা থাকবে।
এই পদ্ধতিতে গেলে তারা হারাধন হয়ে যাবে, দল থাকবে না, ভবিষ্যত থাকবে না। কারণ একক আসনে জেতার মত প্রার্থী নেই, জনসংযোগ নেই, মাঠের কাজ নেই তাহলে জনগণ কেন চাইবে? শুধু উন্নত দেশের একটা সিস্টেম এনে বসালে হবে না তাদের মতো সংগঠন, দলীয় কাঠামো, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, আদালতের নিরপেক্ষতা এবং মানুষের মৌলিক অধিকার সবই আনতে হবে।
তাই যারা গণতন্ত্র চায়, তারা আগে কাজ শুরু করুক প্রত্যেক আসনে নিজেদের যোগ্য প্রার্থী দাঁড় করাক, জনগণের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করুক, জনপ্রতিনিধি তৈরি করুক।
ফাও পাওয়ার চিন্তা বাদ দিন। এটা গণতন্ত্র, গেম না।
নইলে “আমও যাবে, শালাও যাবে!” লও ঠেলা! খেলা হবে? আসো খেলো তবে!
কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গাজী সাইফুল ইসলাম মিথুন এই বিষয় সাংবাদিকদেরকে তাদের মত প্রকাশ করেন।